নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় অবৈধ মাটি ব্যবসার বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে একের পর এক মামলা হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। মামলা হওয়া মাটির পয়েন্ট গুলোর বেশির ভাগই বন্ধ রয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে মামলা হয়নি মাটির বড় পয়েন্ট গুলোয়। সেই পয়েন্ট গুলোর মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য এখনো অপ্রতিরোধ্য।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মাটি ব্যবসায় জড়িত এবং জমির মালিকের নামে নিয়মিত মামলা হয়েছে মোট ৯টি। ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তারা বাদী হয়ে থানায় মামলা গুলো করেন। পৃথক মামলা গুলোয় নামিয় মোট আসামি হয়েছে ১৭জন এবং অজ্ঞাত ২৩জন সহ মোট আসামি ৪০জন। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০এর ১৫(১) ধারায় করা মামলা গুলোয় সহজে জামিন পেয়ে যায় আসামিরা।
উপজেলার সবচেয়ে বড় ৫টি মাটির পয়েন্ট আশেকপুর এবং মাদলা ইউনিয়নে। তবে উল্লেখযোগ্য এই পয়েন্ট গুলোর কোনটির বিরুদ্ধেই এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এর বাহিরেও খড়না ইউনিয়নের নাদুরপুকুর এবং গোহাইল ইউনিয়নের খাদাশ গ্রামে মাটির পয়েন্ট চললেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
শাজাহানপুর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি বছরে গোহাইল ইউনিয়নের আতাইল গ্রামে অনুমতি ছাড়া মাটি কাটায় নিয়মিত মামলায় আসামি হন মৃত জয়নাল আবেদিন প্রামানিকের ছেলে মোঃ মোস্তাফিজার রহমান প্রামানিক(৭০), মোঃ এরফান আলী প্রামানিক(৬৫) সহ অজ্ঞাত ৩জন।
ওই ইউনিয়নের চেলো গ্রামে মামলায় আসামি হন মৃত নগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথের ছেলে নরোত্তম চন্দ্র দেবনাথ(৬৫) এবং তাঁর ছেলে রনজিত চন্দ্র দেবনাথ(৩২) সহ অজ্ঞাত ৩জন।
আমরুল ইউনিয়নের কুন্দইশ গ্রামে মামলায় আসামি হন মৃত ইদু প্রামানিকের ছেলে মোঃ জাহিদ হোসেন প্রামানিক(৫০) সহ অজ্ঞাত ৩জন।চোপিনগর ইউনিয়নে মামলায় আসামি হন ক্ষূদ্র ফুলকোট গ্রামের মৃত ইছাহাক দেওয়ানের ছেলে মোঃ মোজাম্মেল হক দেওয়ান(৬০) সহ অজ্ঞাত ৩জন।
মাদলা ইউনিয়নে একটি মামলায় আসামি হন রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত হায়দার আলী মন্ডলের ছেলে মোঃ মোশারফ হোসেন মন্ডল(৫৮) সহ অজ্ঞাত ৩জন।একই তারিখে ওই ইউনিয়নে আরেকটি মামলায় আসামি হন মৃত মনির উদ্দিন কাজীর ছেলে মোঃ আব্দুর রউফ কাজী(৬০), মৃত আফতাব হোসেন কাজীর ছেলে মোঃ আমিনুল হক কাজী(৪৫), নুরুল ইসলাম কাজী(৪৭), খালেক মন্ডলের ছেলে রিপন মিয়া(৩৭), মৃত সোলায়মান আলী মন্ডলের ছেলে মাসুদ মন্ডল(৩৫), আব্দুস সামাদের ছেলে বিপ্লব(৩২), পুটু মিয়ার ছেলে বাবু মিয়া(৩২) সহ অজ্ঞাত ৩জন।খোট্রাপাড়া ইউনিয়নে একটি মামলায় আসামি হন ঘাসিড়া নওদাপাড়া গ্রামের মৃত ইছাহাক আলী ফকিরের ছেলে মোঃ কাশেম আলী ফকির(৫৫) সহ অজ্ঞাত ৩জন।
মাদলা ইউনিয়নের দরিনন্দ গ্রামে মামলায় আসামি হন জাহাঙ্গীর হোসেন(৫০) সহ অজ্ঞাত ৩জন। একই সময়ে চোপিনগর ইউনিয়নের বিল কেশপাথার গ্রামে আরেকটি মামলায় আসামি হন সাজু আকতার এর ছেলে মুকুল মিয়া(৪৫) সহ অজ্ঞাত ৩জন।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মামলা হওয়া মাটির পয়েন্ট গুলোর বাহিরেও উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া ফকির পাড়া এবং পারতেখুর গ্রামে। জোড়া ফকিরপাড়া গ্রামের পয়েন্ট চালাচ্ছেন উপজেলা তাঁতী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জোব্বার সোহেল। বলেন, জমির মালিকের কাছ থেকে আমার নামে মাটি লিখিত করে নিয়ে ২মাস ধরে মাটি কাটছি। কয়েকদিন হলো পয়েন্ট বন্ধ রেখেছি।
এই পয়েন্টর সাথে জড়িত আশেকপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ও আশেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সাকিদার এর নাম শোনা যায়। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার নাম করে কেউ কেউ মাটি কাটছে এমনটা শুনেছি। এটা সঠিক নয়। সমস্ত মাটির পয়েন্ট বন্ধ করতে হবে।
জানতে চাইলে আশেকপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া ফকির পাড়া, চকজোড়া এবং পারতেখুর গ্রামে মাটির পয়েন্ট ছিলো। ২মাস আগে আমরা সমস্ত পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছি।
যদিও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে গ্রামবাসি বলছেন, এই ইউনিয়নের সবগুলো মাটির পয়েন্ট চালু আছে। রাত ১০টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত পয়েন্ট চালু থাকে।
মাদলা ইউনিয়নের বলদীপালান গ্রামে ফসলী মাঠের ভিতরে মাটির পয়েন্ট চালাচ্ছেন মেহেদী হাসান রানা এবং মালিপাড়া এলাকায় জয়নালের ইট ভাটা সংলঘ্ন একটি মাটির পয়েন্ট চলছে। যে পয়েন্ট গুলোতে এখনো মামলা হয় নাই। মেহেদী হাসান রানার মোবাইল ফোনে অনেক বার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেন নাই।জানতে চাইলে মাদলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, আমার কোন মাটির পয়েন্ট নাই। জয়নালের ভাটার ওখানে একটি পুকুর সংস্কার হয়েছে। সেখানে আর কোন মাটি নাই। অভিযোগ হয় এমন জায়গা থেকে মাটি না কাটাই ভালো।জানতে চাইলে শাজাহানপুর থানার ওসি ওয়াদুদ আলম বলেন, অনুমতি না নিয়ে মাটি কাটার মামলায় আসামি সহজেই জামিন পায়। মাটি কাটার সংবাদ পাওয়া গেলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) জান্নাতুল নাইম বলেন, অনুমতি না নিয়ে মাটি কাটার ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। আশেকপুর ইউনিয়নের মাটির পয়েন্ট গুলোর সংবাদ পাই নাই। শুনেছি সেগুলো বন্ধ রয়েছে।