মোঃ আশরাফুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিনিধি
২০২০ সালের ১০ই মার্চ পরিবার পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার ৩ বছর পর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চাকুরীর আশায় প্রায় সাড়ে তিনলক্ষ পরিক্ষার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করলেও এত সংখ্যক পরীক্ষার্থীর মধ্যদিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, মাত্র ৭৬২১ জন ।
উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০২৩ সালের ২৫ মে থেকে শুরু করে পরবর্তী মাসের ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরিক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরিক্ষার ৩ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও মৌখিক পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও চাকরিতে নিয়োগের ব্যপারে কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন চাকরি প্রত্যাশিরা।
এর মাঝে মৌখিক পরীক্ষার পর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল পদের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে কিন্তু পরিবার কল্যান পরিদর্শিকার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীরা ০১ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে ২৮ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৫ বার চূড়ান্ত ফলাফলের দাবিতে মানববন্ধন করে আসছেন এবং কয়েকদিন যাবত সারারাত পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের মূল ফটকের সামনেই শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলমান রেখেছেন। দাবি আদায় না পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগীরা চাকরি প্রত্যাশিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রত্যেকবার মানববন্ধন শেষে কর্তৃপক্ষকে আমরা আমাদের চূড়ান্ত ফলাফল এর দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসছি। কর্তৃপক্ষ ডিসেম্বর ২০২৩ এর মধ্যেই চূড়ান্ত ফলাফল প্রদান করার মৌখিক ভাবে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু ভাইভা নেয়ার ৮ মাস পর ৭৬২১ জন প্রার্থীর স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিয়ে বিপুল সংখ্যক নারীর মাতৃত্ব গ্রহন না করার ত্যাগ কে অস্বীকার করে গত ১৪/০১/২০২৪ইং তারিখে অধিদপ্তর উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিগত দিনের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করে একটি নোটিশ জারি করেন।
উল্লেখ্য যে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর কর্তৃক শর্ত প্রদান করা হয়েছিলো যে, “চূড়ান্ত কৃতকার্য প্রার্থীরা যোগদানের পূর্বে সিভিল সার্জন কর্তৃক শারীরিক সুস্থতা গর্ভবর্তী নয় এই মর্মে সনদ দাখিল করতে হবে। গর্ভবতী হলে তার মনোনয়ন বাতিল বলে গণ্য হবে।” শুধুমাত্র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির এই অমানবিক শর্তের কারনে প্রার্থীরা দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর মাতৃত্ব গ্রহণ করতে পারেন নি।
এছাড়াও এই ৫ বছরে অধিকাংশ প্রার্থীরই সরকারি চাকুরির বয়সসীমা অতিক্রম করেছে। ১৪/০১/২০২৪ ইং তারিখে ফলাফল বাতিলের পর আমরা সাধারণ প্রার্থীরা ২১/০১/২০২৪ ইং তারিখে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করি। ওই রিট পিটিশন থেকে মহামান্য হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন।
এই মর্মে যে, চাকরি প্রত্যাশিদের ফলাফল প্রকাশে আর কোনো বাধা রইলো না। সেই রুলকে চ্যালেঞ্জ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। পরবর্তীতে অ্যাপিলেড ডিভিশনে ২৮/০২/২০২৪ ইং তারিখে অধিদপ্তর আপিল করে ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশন থেকে ২৮/০৪/২০২৪ ইং তারিখে সেই রুলকে বহাল রেখে অধিদপ্তরের দাখিলকৃত আপিলটি ডিজপোজ করে দেয়।
হাইকোর্টকে নির্দেশনা প্রদান করেন যে, ২ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করার জন্য। অথচ হাইকোর্ট বিভাগ থেকে ১৫/১২/২০২৪ ইং তারিখে মামলাটির রিট পিটিশন নাম্বার ১১১/২০২৪ থেকে রায় প্রকাশ করা হয়। উক্ত রায়ে ১৪/০১/২০২৪ ইং তারিখের বাতিল নোটিশ প্রত্যাহার সহ তিন মাসের মধ্যে ৭৬২১ জন প্রার্থীর পূনরায় মৌখিক পরিক্ষা ও চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের নির্দেশনা প্রদান করেন মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের দাবিসমূহঃ
আমাদের দাবি:
(১) ১৪/০১/২০২৪ ইং তারিখে বাতিল নোটিশ প্রত্যাহার করে, মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করে দ্রুত মৌখিক পরিক্ষার তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
(২) মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ৩ মাসের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
(৩) শূন্যপদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
(৪) চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১৮ মাস প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।