মো মামুন মোল্লা খুলনা বাংলার চেতনা নিউজ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনার কর্তৃক মুমুর্ষ রোগীর অক্সিজেন খুলনার পরই শেখ সাইফুল ইসলাম(৩৮)নামের এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত যুবক সাইফুল ইসলাম খানজাহান আলী থানাধিন যোগিপোল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মৃত শেখ ইসমাইলের পুত্র। ঘটনার পরপরই হাসপাতালে ভর্তি একাধিক রোগির স্বজনরা জানালেন হাসপাতালে যাদের যোগাযোগ আছে তাদের চিকিৎসা আছে সেই সাথে ওয়ার্ড বয় এবং ক্লিনারদের টাকা ছাড়া মেলেনা ভর্তি রোগী সিট এবং অক্সিজেন সহঅন্যান্য সেবা।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্র জানিয়েছে, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে যোগিপোল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খানাবাড়ী কপোতাক্ষ নিবাসী শেখ সাইফুল ইসলাম(৩৮)কে কিডনীজনিত কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের মেডিসিন ইউনিট-১ এর ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে সাইফুলের স্বাসকষ্ট বেড়ে অবস্থার আরো অবনতি হলে স্বজনরা অক্সিজেনের জন্য ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছোটাছুটি করে ব্যার্থ হয়। অনেক চেষ্টা করে রাতে মেনেজ হয় অক্সিজেন কিন্তু সকালে ওয়ার্ডের ক্লিনার এসে পার্শবর্তি অন্য একটি রোগীর জন্য অক্সিজেন খুলে নিয়ে যায়। অক্সিজেন খুলে নেওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে রোগীটি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।
নিহত সাইফুলের মা রশিদা বেগম জনায়, মুমুর্ষ অবস্থায় আমার ছেলেকে একটু অক্সিজেন জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করার পর ব্যার্থ হয়ে আমার ছেলেকে বিষয়টি জানাই। অনেক চেষ্টার পর গভীর রাতে আমার ছেলেকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। সকালে আবার সেই অক্সিজেন খুলে নিয়ে যাওয়ার পরপরই আমার ছেলে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। নিহত সাইফুলের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম জানায়, সাইফুলকে ২০ সেপ্টেম্বর কিডনিজনিত কারণে মুমূর্ষ অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ভর্তি করি। ভর্তির পর তার অবস্থা আরো অবনতি হয় তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে অনেক চেষ্টা করেও তাকে অক্সিজেন দিতে ব্যর্থ হই। পরে এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে অনেক চেষ্টায় রাত ১ টার পর তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়। সকাল ৭টার পর ওয়ার্ড ক্লিনার জব্বার(আউটসোসিং) আমার ভাইয়ের অক্সিজেন খুলে নিয়ে পার্শবর্তি অন্য একটি রোগীকে নিয়ে দেয়। অক্সিজেন খুলে নিয়ে যাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যেই আমার ভাই ছটফট করতে করতে মারা যায়। সাইফুলের পার্শবর্তি একাধিক রোগীর স্বজরা জানায়, হাসপতালের একটি লোক এসে নাক থেকে নল খুলে সিলিন্ডারটা নিয়ে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রোগীটা মারা যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেডিসিন ইউনিট-১ এর ওয়ার্ড ক্লিনার জব্বার (আউটসোর্সিং) অক্সিজেন খুলে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন আমি একজন মুমূর্ষ রোগীর জন্য তাদের কাছে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারটা নিয়ে যাই। কোন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগীর কাছ থেকে অক্সিজেন খুলে নেওয়া বা অন্য রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া তার ডিউটির মধ্যে পড়ে কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারে নাই। অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলে অক্্িরজের খুলে নিয়ে তিনি যে একটা অপরাধ করেছে সে বিষয়ে তার কোন অনুশোচনা নাই। অভিযোগ আছে হসপিটালের ওয়ার্ড বয় এবং ক্লিনারদের টাকা না দিলে মেলেনা ওয়ার্ডে সিট এবং অক্সিজেনসহ অন্যান্য সেবা ।
এ বিষয়ে কথা বলতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হসপিটালের পরিচালক ভারপ্রাপ্ত ডাঃ আক্তারুজ্জামান এর চেম্বারে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সাংবাদিকরা তার মুঠো ফোনে ফোন দিলে তিনি জানান ওয়ার্ডে জরুরী চিকিৎসা সেবার কাজে ব্যস্ত আছেন।
পরে এ বিষয়ে হসপিটালের উপ-পরিচালক ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, হসপিটালে অক্সিজেনের কোন সংকট নাই পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন আছে। মুমূর্ষ রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া বা খুলে নেওয়া ওয়ার্ড ক্লিনারের কাজ নয়। তিনি জানান একজন রোগী কখন অক্সিজেন পাবে এবং কখন অক্সিজেন পাবে না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন ওয়ার্ডের ডাক্তার। যে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া আছে সে রোগীর অক্সিজেন খুলতে হলে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে খুলতে হবে। ওয়ার্ড ক্লিনার যদি খুলে নিয়ে থাকে তবে তিনি অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়াা হবে। পরে তিনি এ বিষয়ে ওয়ার্ডের নার্স ওয়ার্ডবয়সহ দায়িত্বশীলদের ডেকে নেন এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে নিহত সাইফুলের জানাযায় ২১ সেপ্টেম্বর আছরবাদ খানাবাড়ী বাইতুল আরাফাত জামে মসজিদ সংলগ্নে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত সাইফুলের স্ত্রী ও ছয় বছর বয়সি একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।।