শেখ মাহতাব হোসেন ডুমুরিয়া খুলনা বাংলার চেতনা নিউজ।
বুধবার ১৩ আগষ্ট সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নে মানিক তলা মাঠে ফসলের উপকারি ও অপকারী পোকা মাকড় সনাক্ত করণের জন্য আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়। উক্ত ফাঁদে কোন প্রকার ক্ষতিকর পোকা মাকড়ের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের তিন জন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। এ টি আই ছাত্র ছাত্রী এবং কৃষক কৃষাণী বৃন্দ।উল্লেখ্য উজ্জ্বল আলোতে আকৃষ্ট হয়ে ধানের মাজরা পোকার মথ, বাদামি গাছফড়িং, শিষকাটা লেদা পোকা, ধানের পাতা মোড়ানো পোকা, সবুজ পাতাফড়িং, চুঙ্গি পোকা, গলমাছি, গান্ধিপোকা, সাদা ফড়িং, পাটের বিছাপোকা, উড়চুঙ্গা, কালো শোষক পোকা, ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার মথ, শুঁয়া পোকাসহ বিভিন্ন ফসলের অনিষ্টকারী পোকা এসে ফাঁদে পড়ে মারা যায়অনিষ্টকারী পোকামাকড় ফসলের প্রধান শত্রম্ন।এদের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য জমিতে ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। এতে উপকার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এ বিষাক্ত পদার্থগুলো অনায়াসে জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে মাছের বিপদ ডেকে আনছে। পাশাপাশি পরিবেশকে করছে দূষিত। এছাড়া পোকার উপস্থিতি না বুঝে বালাইনাশক ব্যবহার করছেন কৃষকরা।কৃষি বিশেষজ্ঞরা একটি প্রযুক্তি বের করেছেন, যার নাম সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা। সংক্ষেপে বলা হয় আইপিএম। আলোক ফাঁদ হচ্ছে এরই অংশবিশেষ। অন্যভাবে বলা যায়, কী ধরনের পোকার আক্রমণ হয়েছে তা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এক সহজ পদ্ধতির নাম আলোক ফাঁদ। অত্যন্ত কার্যকর এ পদ্ধতি ব্যবহারে একদিকে যেমন ফসলের ক্ষতিকর পোকাগুলো মারা যাবে, সে সঙ্গে উপকারী পোকাও হবে সংরক্ষণ। পক্ষান্তরে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হবে না।
ফাঁদ তৈরির উপকরণ: ফাঁদ তৈরির জন্য লাগবে বৈদু্যতিক তার, বাল্ব, হারিকেন, হ্যাজাক লাইট, চার্জার, তিনটি বাঁশ, গাছের ডাল, পস্নাস্টিকের গামলা, রশি, পানি এবং ডিটারজেন্ট পাউডার ও কেরোসিন।
যা করতে হবে: জমির আইল থেকে আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে স্থান নির্বাচন করতে হবে। প্রথমে বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিভুজ আকারে মাটিতে পুঁতে মাথার অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হয়। এরপর মাটি হতে আড়াই থেকে তিন ফুট উপরে একটি জলন্তবাল্ব খুঁটির তিন মাথার সংযোগস্থলে রশি সাহায্যে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এর নিচে একটি বড় আকারের পস্নাস্টিকের গামলা বা পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিনমিশ্রিত পানি রেখে এমনভাবে বসাতে হবে, যাতে পোকা এর বাহিরে না পড়ে।
সূর্যাস্তের আধা ঘণ্টা পর থেকে শুরু করে সন্ধ্যার কালো কালিমা দূর না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ দু’আড়াই ঘণ্টা সময় ধরে আলোক ফাঁদ চালু রাখতে হয়। এভাবে প্রতি সন্ধ্যায় একাধারে তিন থেকে চার দিন করতে হবে। জ্যোৎস্না রাতে এর কার্যকারিতা নেই। উজ্জ্বল আলোতে আকৃষ্ট হয়ে ধানের মাজরা পোকার মথ, বাদামি গাছফড়িং, শিষকাটা লেদা পোকা, ধানের পাতা মোড়ানো পোকা, সবুজ পাতাফড়িং, চুঙ্গি পোকা, গলমাছি, গান্ধিপোকা, সাদা ফড়িং, পাটের বিছাপোকা, উড়চুঙ্গা, কালো শোষক পোকা, ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার মথ, শুঁয়া পোকাসহ বিভিন্ন ফসলের অনিষ্টকারী পোকা এসে ফাঁদে পড়ে মারা যায়।
সৌরশক্তির মাধ্যমেও আলোর ফাঁদ তৈরি করা যায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত এ ফাঁদ সূর্যের আলো নিভে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ওঠে এবং অন্ধকার কেটে আকাশ পরিষ্কার হলে বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য ২০ ওয়াটের স্বচ্ছ একটি সৌর প্যানেল লাগবে। আর এতে খরচ হবে প্রায় দেড় হাজার টাকা। ব্যবহার করা যাবে অনেক দিন। এতে ১০০ মিটার দূর থেকেও পোকা আসে। প্রতি দিন পরিষ্কারের প্রয়োজন হয় না। সপ্তাহে একবার করলেই যথেষ্ট।নির্বিঘ্নে ধানের উৎপাদন বাড়াতে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় দমন জরুরি। আর আলোক ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমেই তা অনেকটা সম্ভব। আলোক ফাঁদ এমন এক প্রযুক্তি, যার ব্যবহারে কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। পাশাপাশি অনিষ্টকারী পোকার উপস্থিতিও বোঝা যায়। এর খরচ খুবই কম। সহজে পোকা দমন করা যায়। পরিবেশ থাকে অনুকূলে। এতে চাষের উৎপাদন খরচ কমবে, সেই সঙ্গে কৃষক হবেন লাভবান। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসান ইবনে আমিন বলেন, আমাদের এই কার্যক্রম প্রতিটি ব্লকে নিয়মিত ভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে ও কৃষকরাও ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে।।