নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ৩০ এপ্রিল, বুধবার বিকেল ৪টায় নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায় প্রয়াত কারাবন্দি বিএনপি নেতা বি.এম. বাকির হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার আনোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে উপস্থিতছিলেন, কালিয়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা ইউসুফসহ উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
কে এই বাকির হোসেন:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)–এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ব্যাংকস এমপ্লয়ীজ ফেডারেশন (বি–১৯৬৩) ও সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়ীজ অ্যাসোসিয়েশন (বি–৬৬০) সিবিএ’র সভাপতি এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচিত সদস্য। বি.এম. বাকির হোসেন কারাগারে বন্দী অবস্থায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিবারের দাবি—এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
বি.এম. বাকির হোসেন ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ জাতীয়তাবাদী নেতা। স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে তিনি টানা ৫ বছর কারাবন্দি ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জননিরাপত্তা আইন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন আটক রাখা হয়। এরপর ২০০৭ সালের ১/১১ সরকারের সময় আরও ৪টি মামলায় তিনি দুই বছর কারাভোগ করেন। সর্বশেষ তিনি আবারো গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় এক বছর কারাগারে থাকাকালীন রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
এ বিষয়ে মৃত বি.এম. বাকির হোসেনের ভাই, অধ্যাপক (অব.) বি.এম. নাগিব হোসেন বলেন, “আমার ভাই ছিলেন বিএনপির একজন সাহসী যোদ্ধা, যিনি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। আর সে কারণেই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর এমন দীর্ঘ সময় কোনো শ্রমিক নেতা কারাবরণ করেছেন বলে আমার জানা নেই। কারাগার সরকারের নিয়ন্ত্রণে—সেখানে তাঁর এই মৃত্যু একেবারেই স্বাভাবিক হতে পারে না। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার আনোয়ার হোসেন বলেন, “বি.এম. বাকির হোসেন ছিলেন শ্রমিক ও গণমানুষের অগ্রসৈনিক। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শুধু একজন রাজনীতিবিদ নয়, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এক প্রতীক হারালাম। আমরা এর পূর্ণাঙ্গ বিচার চাই।”
কালিয়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা ইউসুফ বলেন, “বি.এম. বাকির ভাইয়ের মতো সংগ্রামী নেতা আমাদের রাজনীতিতে বিরল। তাঁর মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলা যায় না, আমরা এর সঠিক বিচার করি।”
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে এই মৃত্যুকে ঘিরে গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এলাকাবাসী মনে করছে, একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
বক্তারা অবিলম্বে বি.এম. বাকির হোসেনের মৃত্যুর নিরপেক্ষ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বি.এম. বাকির হোসেনের মৃত্যুতে কেবল একটি পরিবার বা একটি দল নয়, গোটা জাতীয়তাবাদী শক্তি এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে—এমনই মত প্রকাশ করেছেন তারা।