তেরখাদা প্রতিনিধি:
১৬ মার্চ, রবিবার তেরখাদা উপজেলা সদরে স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তানিয়া রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনসাধারণের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে তার অবিলম্বে অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন এবং অভিযোগসমূহের সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
অভিযোগসমূহ:
১. কর্মস্থলে অনিয়ম ও দায়িত্বে গাফিলতি:
কর্মস্থলে যথাযথ সময়ে উপস্থিত না থেকে সরকারি চাকরি বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩৪ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। সকাল ৮টা থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অফিসে থাকার কথা থাকলেও তিনি ১০-১১টার আগে উপস্থিত হন না।
২. সরকারি গাড়ির অপব্যবহার:
সরকারি যানবাহন বিধিমালা অনুযায়ী, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জন্য বরাদ্দকৃত যানবাহন তেরখাদার বাইরে ব্যবহারের অনুমতি নেই, অথচ তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে খুলনা শহরে যাতায়াতসহ পারিবারিক কাজে গাড়ি ব্যবহার করেছেন।
৩. স্বাস্থ্যসেবায় গাফিলতি:
আউটডোরে সকাল ৮টা থেকে রোগী দেখা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোনো চিকিৎসক ১০-১১টার আগে বসেন না, ফলে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
৪. অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার:
জনসাধারণের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারীদের প্রতি অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেছেন।
৫. সরকারি অর্থের অপচয় ও অনিয়ম:
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস ভবনের মূল দরজার পাশেই অপ্রয়োজনীয়ভাবে নতুন একটি গেট নির্মাণ করা হয়েছে, যা সরকারি অর্থ অপচয় ও অনিয়মের স্পষ্ট উদাহরণ।
৬. হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
দায়িত্বে অবহেলার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিকাঠামো অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত এবং সেবার মান শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে।
৭. কর্মচারীদের প্রতি অন্যায় আচরণ:
কর্মচারীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ও তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এম্বুলেন্স চালক কুদ্দুসের নিকট থেকে মাসে ৬০ লিটার তেল দাবি করা হয় এবং পরবর্তীতে তা না দিলে তাকে বদলি করা হয়।
৮. নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ:
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালে রোগীদের জন্য সপ্তাহে ৪ দিন মাংস ও ৩ দিন মাছ সরবরাহের কথা থাকলেও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।
৯. অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারে অনিয়ম:
জরুরি রোগী বহনের জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাসপাতাল প্রধানের অনুমতি নিতে হয়, কিন্তু তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ফোন রিসিভ করেন না বা অনুমোদন দেন না, যা চিকিৎসা সেবা ব্যাহত করছে।
মানববন্ধনে বক্তাদের বক্তব্য:
মোঃ ইকরাম হোসেন জমাদ্দার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, ডা. তানিয়া রহমানের বিরুদ্ধে একাধিকবার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, তার দায়িত্বে গাফিলতি, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে সাধারণ রোগীরা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাও পাচ্ছেন না। বক্তারা, তার অপসারণ ও দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বুলু বলেন, “এই ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম সমাজে ক্ষতি করছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল জনগণের সেবা করা, কিন্তু তিনি তার দায়িত্ব পালন না করে জনগণের আস্থা ভেঙে দিয়েছেন। আমরা তার দ্রুত অপসারণ চাই।” শরিফ নাইমুল হক বলেন, “স্বাস্থ্য সেবা ক্ষেত্রে গাফিলতি অবশেষে সাধারণ মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।” মোঃ গোলাম মোস্তফা ভুট্টো বলেন, “আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি, তবে প্রশাসন যদি কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আরো কঠোর আন্দোলন করতে হবে।” বলে জানান।