চৌধুরী জুয়েল রানা স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকস এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের অন্যতম প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মরহুম বি.এম. বাকির হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় তাঁর নিজ বাড়ি নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার দক্ষিণ যোগানিয়ায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে এই মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মরহুমের ছোট ভাই বি.এম. নাগিব হোসেন বলেন, ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নির্দেশে বি.এম. বাকির হোসেনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। সে সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে থাকা অবস্থায় শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং পরে বাকির হোসেনের বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি বলেন একই মামলায় অন্য আসামিরা উচ্চ আদালতে খালাস পেলেও বিএম বাকির হোসেনের আপিল গ্রহণ করা হয়নি, যা বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ২০০৯ সালের ৪ জানুয়ারি তাঁর জামিন শুনানি নির্ধারিত থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।
পরিবার জানায়, ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে প্রাতরাশের কিছুক্ষণ পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাড়ে ১০টায় তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক একটি ইনজেকশন প্রয়োগ করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন এবং দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। উপস্থিত ছিলেন কারা কর্তৃপক্ষের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা, তবে চিকিৎসার বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণ দেখানো হয়নি।
পরিবারের দাবি, কারাগার হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। তাঁকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় এবং মৃত্যুর আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে লালমাটিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানে পরিবারের সদস্যদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। এরপর অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, একজন কারাবন্দি নাগরিক হিসেবে বিএম বাকির হোসেনের চিকিৎসা ও নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি, যা সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি। “আমরা বারবার তদন্তের দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না।”
সংবাদ সম্মেলনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণের দাবি জানান। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী ও আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।