স্টাফ রিপোর্টার বাংলার চেতনা নিউজ।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মাতুব্বর মোঃ রেজোয়ান হোসেন কে ফাঁসাতে ও সামাজিক ভাবে হেয় করতে মিথ্যা মামলার অভিযোগ উঠেছে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চাকরিচ্যুত আউটসোসিং আয়া শাহীনা বেগমের বিরুদ্ধে।
সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটের সদর থানাধীন বরন্দাজপাড় কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা হাতেম আলীর কন্যা ও ফরিদ শেখ এর স্ত্রী শাহিনা বেগম বাগেরহাটের এক আওয়ামী লীগ নেতার সুপারিশে বেসরকারিভাবে জনবল নিয়োগ প্রতিষ্ঠান একতা আউটসোর্সিং লিঃ এর মাধ্যমে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া পদে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে যোগদানের পর থেকে ওই নেতার নিকটতম ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার পরিচয় দিয়ে জোরপূর্বক চাকরির বিধিমালা লংঘন করে ইচ্ছে মাফিক কর্মস্থলে প্রায় সময় অনুপস্থিত থাকেন। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তোয়াক্কা না করে শাহিনা বেগম নিজের ইচ্ছে মতো কর্মস্থলে হাজির হতো। প্রায় ৪-৫ দিন একটানা অনুপস্থিত থাকলেও পরবর্তীতে একদিনে হাজিরা খাতায় সবগুলো স্বাক্ষর করতেন শাহিনা বেগম। হাসপাতালের তৎকালীন কর্মকর্তা ডাঃ শর্মী রায় শাহীনা বেগমের অনিয়মের কারণে তাকে তার জানুয়ারী-২৪ এর এক মাসের বেতন কর্তন করেন। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে মৌখিক ঘোষণা দেয়ায় আওয়ামী লীগের ঐ নেতার মাধ্যমে সুপারিশ করে পুনরায় চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। কিন্তু যোগদানের পরেও সে তার পূর্বের মতো খামখেয়ালি ভাবে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করে। পরবর্তীতে গত ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের পরে শাহিনা বেগম তার কর্মস্থলে একটানা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন এ সময় শাহিনা বেগম লাইজু আক্তার নামের একজন মহিলাকে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতন দিয়ে শাহিনার ওই জায়গায় লাইজুকে দিয়ে কাজ করান এবং তার বেতন এনআরবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে লাইজু আক্তার কে শাহীনা বেগম ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে চলতি বছরের ২ জুলাই।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও অনিয়মের কারণে বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি যোগদানের পর থেকে মাত্র দুই বা তিন দিন শাহীনা বেগমকে ডিউটি করতে দেখেছেন। পরবর্তীতে জনবল নিয়োগ দানকারী প্রতিষ্ঠান একতা আউটসোর্সিং লিঃ কোম্পানিকে জানালে তারা শাহীনা বেগমকে চাকুরীচ্যুত করেন। যে কারণে শাহীনা বেগম ক্ষীপ্ত হয়ে গত ৩১ জুলাই-২৫ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে ঐ এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, মোঃ নাসির সহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে নিয়ে ডাঃ মুজাহিদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন শাহিনা ও তার লোকজন। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুজাহিদুল ইসলাম তার সংশ্লিষ্ট দপ্তর সহ বাগেরহাট পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক এক কর্মকর্তার সহযোগিতায় চাকরিচ্যুত শাহীনা বেগম গত ১৩ জুলাই চাকরিচ্যুত হওয়ার পরে ৩০জুলাই বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল ২ এ অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন যার নাম্বার ৭১/২৫। এ মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মাতুব্বর মোঃ রেজোয়ান হোসেনকে।
পরবর্তীতে শাহিনার মামলার প্রেক্ষিতে মাতুব্বর মোঃ রেজোয়ান হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন।
সেখানে ওই মামলায় চাকরিচ্যুত আয়া শাহিনা বেগম ডাঃ রেজোয়ানা মেহজাবিন স্বাক্ষরিত একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ওই মেডিকেল সার্টিফিকেটটি সম্পূর্ণ জাল জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে বলে প্রমাণ পায়। মেডিকেল সার্টিফিকেটের ব্যাপারে ডাঃ রেজওয়ানা মেহেজাবিন বলেন, বহির্বিভাগের একটি টিকিটে শাহিনা বেগম নির্যাতন এর একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখা যাচ্ছে যার হাতের লেখা এবং স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে এবং এ ধরনের ঘটনায় জরুরী বিভাগের চিকিৎসাপত্র ও পুলিশ ইনজুরি খাতায় নোট করে পুলিশ কেস এর একটি সিল দেয়ার পর চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু
বহির্বিবিভাগের টিকেটে এ ধরনের কোন চিকিৎসা দেয়া হয় না । তার স্বাক্ষর সম্পূর্ণ জাল জালিয়াতি করে সার্টিফিকেটটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ভুক্তভোগী মাতুব্বর রেজোয়ান হোসেন জানান, স্থানীয় আব্দুল হাকিম শেখ, মোহাম্মদ আলী, আরিফুজ্জামান এরা আমার কাছে চাঁদা দাবি করে এবং চাঁদা না দেয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন সহ এ মামলাটি করেছে শাহিনা বেগম। তবে তিনি জানান ২০২২ সালে সন্ত্রাসী একটি গ্রুপ তাকে অপহরণ করেন ওই সময়ে চাঁদার দাবিতে জোরপূর্বক তাকে আটকে রেখে কিছু নগ্ন ছবি তুলে মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে ছেড়ে দেয় মাতুব্বর মোঃ রেজোয়ান কে। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় একটি মামলা করলে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই ছবিগুলোকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠীর কে বা কারা তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে চাকরিচ্যুত আয়া শাহিনা বেগম জানান, তার স্বামীর অসুস্থতা জনিত কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করে লাইজু বেগম নামের একজনকে তার কর্মস্থলে দেন তিনি।।