আবিদ আজাদ দিঘলিয়া প্রতিনিধি বাংলার চেতনা নিউজ।
কয়েকদিন পরেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা শুরু হবে। এ পূজাকে সামনে নিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত কারিগরগণ। দুর্গাপূজার বাকি মাত্র ৯ দিন। সময় কম থাকায় মন্ডপে মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তে প্রতিমা তৈরি ও রং তুলির কাজ শেষ করার ব্যস্ততা।
খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় এ বছর ৬১টি পূজামন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তাইতো দিন রাত মন্ডপে মন্ডপে দেবী দূর্গা, গনেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত ভাষ্করগণ। প্রতিটা মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজে কারিগরদের সামনে সময় কম, তাই দিন রাত ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে চলেছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। কাদামাটি দিয়ে গড়া দেবী দূর্গার প্রতিমায় ভরে উঠছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির। কোনো কোনো মন্দিরে চলছে প্রতিমাগুলোতে দো-মাটির কাজ।
এ সকল মন্দিরের প্রতিমাগুলোতে দো-মাটির কাজ শেষ হলেই শুরু হবে রং তুলির কাজ। কোনো কোনো মন্দিরে প্রতিমাগুলোতে রং তুলির কাজ করছেন কারিগরগণ। প্রতিটা মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে আকার ভেদে কারিগররা মজুরি গ্রহণ করছেন ২০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত কারিগর বিকাশ পাল, দিলিপ পাল ও তাপস পাল এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমা তৈরিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচ বেশি হচ্ছে।
দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি শিব মন্দিরে পূজা আয়োজক কমিটির সভাপতি অমিত ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক বাবু তন্বয় মুস্তাফী ও কোষাধ্যক্ষ বাবু উত্তম দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি মজুরি গ্রহণ করছেন প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত ভাষ্করগণ। যে কারণে পূজার খরচ বেড়েছে অনেক। প্রতি পূজা মন্ডপে সরকারিভাবে ৫০০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
দিঘলিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সৌমিত্র দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, এ বছর খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় ৬১টি পূজামন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সময় হাতে কম থাকায় প্রতিমা তৈরির কারিগর ও আয়োজকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পূজার সময় যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক থাকে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকে সে বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই নেতৃবৃন্দ।
মন্দিরের পাশাপাশি উপজেলার ফরমাইশখানায় বাড়িতে বসেও চলছে মৃৎশিল্পীদের প্রতিমা তৈরির কাজ। এ সকল প্রতিমা তৈরির পর নৌকা বা ট্রলারে করে নিয়ে যায় খুলনার বিভিন্ন এলাকায়। শুধু প্রতিমা নয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই মহামিলনকে ঘিরে তৈরি করছে নানা ধরনের মৃৎশিল্প। খুলনাঞ্চলে ফরমাইশখানার মৃৎশিল্পীদের তৈরি এ মৃৎশিল্পের যেন জুড়ি নেই। তাইতো দেশের প্রত্যন্তাঞ্চল থেকে নৌকা বা ট্রলারে করে নিয়ে যায় মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস। খুলনা, দৌলতপুর, মহেশ্বরপাশা, ফুলতলা, রূপসা, তেরোখাদা, যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাটির তৈরি রঙ্গীন খেলনার জুড়ি নেই। এ কারণে ফরমাইশখানার মৃৎশিল্পের কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ এইচ এম শাহীন এ প্রতিবেদককে জানান, পূজা উপলক্ষে মন্দির কেন্দ্রিক গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিট অফিসাররা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া পূজার দিনগুলোতে আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এবং প্রতিটা মন্ডপের কমিটিদের সেচ্ছাসেবক নিয়োগের ব্যাপারে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটা মন্দিরে যাতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয় সে ব্যাপারে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাগণ বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন। তবে পূজা উদযাপন উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর কোনো সম্ভাবনা নেই এমনটাই জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।।