শেখ মাহতাব হোসেন ডুমুরিয়া খুলনা বাংলার চেতনা নিউজ।
খুলনার বিভিন্ন উপজেলার খাল-বিল ও জলাশয় থেকে বেপরোয়া আহরণ, জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার ও দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনে উপকারী জলজ প্রাণি শামুক হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী শামুকের বংশ বিস্তার হুমকির মুখে পড়েছে।এক সময় খাল-বিল ও জলাশয়ের পানিতে প্রচুর পরিমাণে শামুক দেখা গেলেও এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। শামুক জলজ পরিবেশে ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও তাদের ডিম খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফসলি জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শামুকের ভূমিকা অপরিসীম।
খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, শামুক সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও নজরদারি প্রয়োজন। মানুষ অসচেতন ভাবে শামুক নির্বিচারে নিধন করছে। মৎস্য চাষিরা মাছের খাবার হিসেবে শামুক ব্যবহার করছেন। কিছু মানুষ খাল-বিল থেকে অবাধে শামুক সংগ্রহ করে তা মৎস্য চাষিদের কাছে বিক্রি করছেন।ডুমুরিয়া উপজেলার এলাকার মৎস্য চাষি আব্দুল হালিম বলেন, আমরা ৩০ টাকা কেজি দরে শামুক কিনে মাছকে খাওয়ায়। শামুক যে জীবাণু থাকে, সেই জীবাণু যে মাছে যায়, এটা আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে মৎস্য অফিস থেকে এখন আমাদের সচেতন করা হচ্ছে।
আরেক মৎস্য চাষি মনোজ্ঞ কুমার জানান, মৎস্য অফিস আমাদের সচেতন করছে এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এখন আমরা আর শামুক ব্যবহার করি না।নুমিতা নামে এক নারী জানান, বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন সকালে বিল থেকে আমাদের এলাকার অনেক নারী-পুরুষ শামুক সংগ্রহ করেন। এই শামুক তারা মৎস্য চাষিদের কাছে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে তাদের প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়।ডুমুরিয়া উপজেলার এক দিনমজুর বলেন, সংসার চালানোর জন্য তিনি খাল-বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে মৎস্য চাষিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এতে তার প্রতিদিন ৫০০ টাকার মত আয় হয়ে থাকে।ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, মাছের খাদ্য হিসেবে শামুকের ব্যবহার আমরা নিরুৎসাহিত করে থাকি। কারণ কাঁচা শামুক খাওয়ানোর ফলে মাছের শরীরে রোগ জীবাণু এবং ঘেরে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়। পরবর্তীতে ঐ মাছ বিদেশে রপ্তানি করতে সমস্যা হয়। শামুক মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। খাল-বিলে বেশি পরিমাণ শামুকের বিচরণ থাকার কারণে পানি ও মাটির উর্বরতা বাড়ে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। শামুক মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার না করার জন্য ঘের মালিকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু শামুক বন আইনের অধীনে থাকায় এখানে মৎস্য বিভাগ শুধু সচেতনতামূলক কাজ করতে পারে।।