মহিদুল ইসলাম (শাহীন) খুলনা থেকে,বাংলার চেতনা নিউজ।
খুলনা জেলায় সরকারি ভাবে ধান ও চাল সংগ্রহের নানা শর্তের বেড়া জালে আটকে পড়েছে প্রান্তিক কৃষকরা। ধানে ১২ শতাংশের কম আর্দ্রতা,ব্যাংক হিসাব থাকাসহ এসব শর্তকে ঝামেলা মনে করছেন তারা। ফলে সরকারি গুদামে বেশি দামে ধান বিক্রি না করে বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক কৃষক। এতে অবশ্য তারা নগদ টাকা পাচ্ছেন। সরকারি গুদামে বারবার ঘোরা ও বাড়তি শ্রমসহ খরচ থেকে বাঁচেন বলে দাবি তাদের।
সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে ঝামেলায় পড়তে হয় জানিয়ে পাইকগাছার মদন কুমার রায় বলেন,আট জমিতে বোরো মৌসুমে ১৫০-১৯০ মণ ধান হয়। আমনে ১৫০ মণ হয়। হাটে নিয়ে বিক্রি করি সব সময়। সরকারি গুদামে বিক্রি করতে হলে চার-পাঁচ বার রোদে দিতে হয়। অথচ একবার-দুবার রোদে দিয়ে নিয়ে গেলেই বাজারে বিক্রি করতে পারি। সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ৪৫/৫০ টাকা মণে কম পাই।এই টাকা বেশি পেতে নানা শর্ত মানতে হয়। রোদ বৃষ্টির সময়ে টানা রোদ পাওয়া যায় না। বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা লাগে পানি খরচ। সরকারি বীজ ভালো। নষ্ট হয় না। বিঘায় ৫/৬ কেজি বীজ লাগে। সরকারি বীজ ধানের কেজি ৬০ টাকা। ১২০ টাকা কেজি কোম্পানির বীজ। সরকারি ভাবে শর্ত বেশি দেওয়ার জন্য সমস্যা। হাটে গেলে দাম কম হলেও সমস্যা নেই। ঝামেলা মুক্ত থাকা যায়। ফুলতলার আঃ মালেক হোসেন জানান,৫/৬ বিঘা জমিতে ভালো ধান পাই। সারা বছরের খোরাকি মিটে যায়। তবে ধানে মাজরা পোকার সমস্যা হয়।কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ নিই। তবে নানান নিয়মের কারণে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে ইচ্ছে করে না।
ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন,এ বছর বিঘায় ২৪ মণ ধান পেয়েছি। বাজারে বিক্রি করেছি। ঝামেলা ও নানান শর্তের কারণে সরকারি গুদামে বিক্রি করতে যাইনি। তেরখাদা উপজেলার মালতি দাশ জানান,আগে ধান চাষ করে সংসার চালানো দায় ছিলো। এখন উৎপাদন বেড়েছে। ফলে সংসার চালানোর পরও বিক্রি করতে পারি।সরকারি গুদামে দাম বেশি কিন্তু ঝামেলা অনেক। তাই বাজারে একটু কম দামে বিক্রি করি। সরকারি গুদামে নিতে খরচ লাগে,তাছাড়া অনেক শর্ত মেনে ধান দিতে হয়। তাই এজন্য বাজারে বিক্রি করি। খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় আউশ,আমন ও বোরো চাষ হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯শ ৯২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়। পাওয়া যায় ৬ লাখ ৪ হাজার ৮শ ৬০ টন চাল।২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৭০ হাজার ১শ ১৩ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়। ৬ লাখ ২৪ হাজার ৬শ ৪৭ মেট্টিক টন চাল পাওয়া যায়। জেলায় গত ৫ বছরে ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়লেও পাইকগাছা উপজেলায় গত বছর আবাদ ও উৎপাদন কমেছে। ২৪-২৫ অর্থবছরে পাইকগাছায় ২১ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন হয় ৭৫ হাজার ৪৫৫ টন চাল। অথচ ২৩-২৪ অর্থবছরে এ উপজেলায় ২৩ হাজার ৩৪৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে ৮১ হাজার ৩৮৪ মে টন চাল উৎপাদন হয়েছিল।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন,এ বছর ৫ই জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ৫শ ৭৫ হেক্টর বীজতলার মধ্যে ১শ ৬ হেক্টর আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ হেক্টর জমিই পাইকগাছায়। খুলনায় ২০ হাজার ৮শ ৭০ হেক্টর ফসলের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮শ ৪৮ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সংখ্যা ১৩ হাজার ৭১ জন। এতে মোট আর্থিক ক্ষতি ২৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯৭ হাজার। দুর্যোগ এ অঞ্চলের নিত্যসঙ্গী। এসব মেনেই কৃষি আবাদ করছেন কৃষকরা।’
খুলনা জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ‘চলতি বছর খুলনায় ধান চাল সংগ্রহ অন্য বছরের থেকে অনেক ভালো হয়েছে। তবে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সংগ্রহ হয়েছে। চাল সংগ্রহ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। এখনও সময় আছে। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। গত বছর সিদ্ধ চাল ৯৩ শতাংশ,আতপ চাল শতভাগ ও ধান ৯৮ শতাংশ অর্জন হয়েছিল। এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।।