নিজস্ব প্রতিবেদক
লতিফ সম্রাটের ভার্চুয়াল বার্তায় ঐক্যের আহ্বান, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নেতাদের দৃঢ় শপথ
নড়াইলের কালিয়া উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টায় কালিয়া উপজেলা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন। তাঁর ভাষণ শুরু ও সমাপ্তি হয় কোরআনের বরকতময় আয়াত দিয়ে, যা তাঁর গভীর আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার পরিচায়ক।
সম্রাট বলেন, “আমাদের দলের শক্তি ঐক্য, সম্মান ও পারস্পরিক মূল্যায়নে নিহিত। দলকে দুর্বল করার জন্য কিছু প্রভাবশালী নেতারা সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়ন করছেন। চিনা নেতাদেরকে ‘হাইব্রিড’ বা ‘অতিথি পাখি’ বলে অবজ্ঞা করা, বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং দলের ঐক্য নষ্ট করার উদ্দেশ্য বহন করে। এই ধরনের বিভাজনমূলক মনোভাব আমরা কখনো মেনে নেব না।”
তিনি বজ্রকন্ঠে বলেন, “ সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়ন এবং নেতাদের প্রতি অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য দলের সুস্থ রাজনৈতিক গতিপথে বাধা সৃষ্টি করছে, যা দলের প্রতিরোধে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে দলের সকল শ্রেণি ও স্তরের নেতৃবৃন্দের সতর্ক থাকা জরুরি।”
সম্রাটের বক্তব্যে দলের প্রতি গভীর দায়িত্ববোধ এবং সুশাসনের আহ্বান স্পষ্ট। তিনি উল্লেখ করেন, “বিএনপি হবে এমন একটি দল যেখানে স্বচ্ছতা, ঐক্য ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিশ্চিত থাকবে। দলের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের স্বৈরাচারী মনোভাব বা প্রতিহিংসার রাজনীতি থাকবে না।”
অন্যদিকে, অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, “দলীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে আদর্শ ও গণতান্ত্রিক পথ দেখিয়ে গেছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের দল দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় সিনিয়র নেতাদের সম্মান জানানো, মতবিরোধ হলেও শ্রদ্ধার ভাষায় মত প্রকাশ করা—এটাই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হওয়া উচিত।”
তিনি বলেন, “ কিছু নেতার বক্তব্যে আমরা হতাশ হই, যখন দেখা যায় সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কে অবমাননাকর শব্দ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ‘হাইব্রিড’, ‘অতিথি পাখি’—এই শব্দগুলো শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, পুরো দলের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকেই অপমান করে। আমার ভাই, শহীদ বিএম বাকির হোসেন এই দলের জন্য কারাবরণ করেছেন এবং কারা হেফাজতেই রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পরিবার বিএনপির আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছে। আমি নিজে অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন, এই দলেরই সন্তান—আমরা কেউ ‘অতিথি পাখি’ নই। তাই দলের বিষয়ে মন্তব্য করার আগে ইতিহাস, ত্যাগ ও অবদানের বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি কোনো ব্যক্তির নয়, এটি একটি আদর্শিক সংগ্রামের নাম। আমরা যারা দলের ভেতরে নেতৃত্ব দিচ্ছি, আমাদের দায়িত্ব হল এই আদর্শকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করা। বিভাজন নয়—শ্রদ্ধা, সংলাপ ও দায়িত্বশীলতার মধ্য দিয়েই দল এগিয়ে যাবে। শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের প্রত্যেককে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে—এটাই আজকের শপথ হওয়া উচিত।” এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচির লিফলেট বিতরণ করেন অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন। তিনি উল্লেখ করেন, “৩১ দফা কর্মসূচি জাতির মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অটুট রোডম্যাপ, যা দেশের গভীর সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাবে।”
নেতাকর্মীরা লিফলেট গ্রহণ করে দেশ ও দলের ভবিষ্যৎ গঠনে তারেক রহমানের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
ডাঃ আহমেদ শরিফুল হায়দার পারভেজ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই—স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক বিএনপি গঠন। সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়ন ও বিভাজনমূলক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।”
টেক্সাস স্টেট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কোনো ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তি নয়—এটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রক্ত, ত্যাগ ও আদর্শে গড়া একটি সংগঠন। যারা আজ সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়ন করে ‘অতিথি পাখি’ বা ‘হাইব্রিড নেতা’ জাতীয় শব্দ প্রয়োগ করছেন, তারা মূলত দলের ভিতরেই ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন। এইসব বক্তব্য কেবল অর্বাচীন নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে দলের ঐতিহ্য ও নেতৃত্বকে খাটো করার অপচেষ্টা।”
তিনি বলেন, “যাঁদের রক্তে বিএনপি গড়া, যাঁদের পরিবারের সদস্যরা শহীদ হয়েছেন, যাঁরা বিদেশের মাটিতে দিনরাত দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন—তাদের বিরুদ্ধে বিভাজনমূলক বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপি কারো দয়ার দান নয়, বরং এটি শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে জন্ম নেওয়া গণআন্দোলনের নাম। যারা ইতিহাস জানে না, ত্যাগকে শ্রদ্ধা করে না—তাদের জায়গা দলে থাকা উচিত নয়।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই—টেক্সাস বিএনপির পক্ষ থেকে এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যকে আমরা ঘৃণা করি এবং প্রত্যাখ্যান করি। সংগঠনকে যদি কেউ বিভক্ত করার চেষ্টা করে, তাকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে প্রতিহত করা হবে। সময় এসেছে—দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি জুলফিকার আলী মন্ডল, সাবেক জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সুজা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ এস সাহা আনন্দ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মিঠু, সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম সাগর, কালিয়া পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক সাইদুজ্জামান পাশা, সাবেক ভারপ্রাপ্ত কৃষক দল সভাপতি এম রেজাউল করিম।
সভাপতিত্ব করেন কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার আনোয়ার হোসেন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন কালিয়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা ইউসুফ।
সবশেষে নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন।