স্টাফ রিপোর্টার বাংলার চেতনা নিউজ।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘী ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে চাত্রাগাড়ী নামে একটি সরকারি খাস পুকুর ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা। পুকুরটি দীর্ঘ ৯ বছর ধরে স্থানীয় সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির কর্তৃপক্ষ সরকার থেকে নিয়মিত লীজ নিয়ে ব্যবহার করে আসছিল। মন্দির সংলগ্ন এই খাস পুকুরটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কার্যক্রম ও মন্দিরের ব্যয় নির্বাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল এ গ্রামে প্রায় ৬৫ হিন্দু ধর্মের মানুষ বসবাস করে পুকুরটি লীজ দিয়ে তাদের মন্দিরের পূজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়।
জানা গেছে, সর্বশেষ মেয়াদে পুকুরটি মন্দির কর্তৃপক্ষ লীজ দেয় স্থানীয় একজন মৎস্যচাষীকে দুই বছরের জন্য, যার মেয়াদ শেষ হয় বাংলা বছরের চৈত্র মাসে। এরপর নতুন অর্থবছরের শুরুতে মন্দির কমিটি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনরায় লীজ গ্রহণের আবেদন জানালে জানানো হয়, আপাতত সরকারি লীজ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে, কমিটির দাবি অনুযায়ী, পূর্বের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী মৌখিকভাবে পুকুরটি ভোগদখলের অনুমতি দেওয়া হয়।
এদিকে মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে, পূর্বের লীজগ্রহীতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিদ্দিক সরকারিভাবে নতুন করে লীজ না নিয়েই পুকুরটি দখল করছেন। তিনি দাবি করেন, নতুনভাবে লীজ পেয়েছেন এবং ইতোমধ্যে মাছ চাষ শুরু করেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি সময়েই সিদ্দিক পুকুর থেকে মাছ তুলে নিয়ে গেছেন, যা প্রশ্ন তোলে তার দাবির সত্যতা নিয়ে।
শ্রীশ্রী ঝিনা হিন্দুপাড়া সর্বজনীয় প্রধান কমিটি দূর্গা মন্দিরের সভাপতি কৃষ্ণ প্রামাণিক বলেন, এই পুকুরটি আমাদের মন্দিরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ৯ বছর ধরে আমরা নিয়ম মেনে সরকার থেকে লীজ নিয়ে ব্যবহার করে আসছি। হঠাৎ করে এক পক্ষ এসে বলছে তারা লীজ পেয়েছে কোনো প্রমাণ ছাড়াই। এটি সম্পূর্ণ অন্যায়। আমরা প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চাই। কোর্টের রায় পর্যন্ত অন্তত কেউ যেন বেআইনিভাবে পুকুর ব্যবহার করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দাবি জানাই।অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিক বলেন, পুকুরটি প্রথমে আমি মন্দির কমিটির কাছ থেকে লীজ নিয়েছিলাম পরবর্তীতে ওই গ্রামের স্থানীয় আলমগীর নামে একজনের কাছ থেকে লীজ নিয়ে মাছ চাষ করছি।সরকারি পুকুর লীজ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আলমগীর হোসেন বলেন, আমি কাউকে সরকারি পুকুর লীজ দেইনি ইউএনও ওই পুকুর ছেড়ে আসতে বলেছে আমি আর পুকুরে যাইনি।
সিংড়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, দুই পক্ষই আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি এই পুকুর সংক্রান্ত একটি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে এবং কোর্ট থেকে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। কোর্টের রায় না হওয়া পর্যন্ত পুকুরে কোন পক্ষই প্রবেশ বা ভোগদখল করতে পারবে না।এই ঘটনার পর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম উদ্বেগ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা মনে করছেন, ধর্মীয় স্থাপনার সংলগ্ন সম্পদ নিয়ে এমন অনিয়ম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোর্টের আদেশ কার্যকর রেখে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধানের আশা করছেন এলাকাবাসী।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নজরুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক এন আই নবী। খুলনা অফিসঃ ৬/১ পাবলা কেশবলাল রোড, দৌলতপুর, খুলনা। মোবাইলঃ ০১৭১৩৭০৮১৯
Copyright © 2025 বাংলার চেতনা. All rights reserved.