লেখক আবু আসলাম বাবু।
একটা হৃদয় বিদারক ঘটনা আজকের আন্তর্জাতিক ঐতিহাসিক পহেলা মে। সাধ্যের বাইরে জোর করে কারো উপর কোন কাজ চাপানো যায় না খাটানোও যায় না। একজন মানুষ তো সে ,রোবট তো নয়, ষোল ঘন্টা কি করে তাকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয় তা ভাবনার বিষয়। এমনি একটা হৃদয়বিদারক ঘটনার ভাবনা থেকে ধীরে ধীরে চেতনার এবং পরিশেষে প্রতিবাদের দাবানল জ্বলে উঠলো। ১৬ ঘন্টা কাজের প্রতিবাদে সেদিন আমেরিকার শিকাগোর হে মার্কেটের বেকারি শ্রমিকরা এই অমানবিক শ্রম আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন । তাদের দাবি আমাদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দাও , কিন্তু না, শোষকেরা শোষণের যাতাকলকে বন্ধ করতে চাইলেন না। নারী শিশু নির্বিশেষে রোজ ১৬ থেকে ২৭ ঘন্টা আচ্ছামতো খাটায়ে নেবে, এ শোষনের স্টিম রোলার আর বেশিদিন স্থায়ী হলো না, শ্রমিকরা শুরু করলো আন্দোলন , রাজপথে নেমে পড়লো। সরকারের নির্দেশে সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হলেন Albart R persons, August spyja, Luikeing Samayal, J findel, Eugen squore, Jurge Angel, Adlof fisher, Osqur সহ কয়েকজন ত্যাগী শ্রমিক নেতা।
তবু তারা থমকে পড়লেন না , শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে সেদিনের সেই হে মার্কেটের বেকারি শ্রমিকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা একত্র হয়ে জোরালো আন্দোলন চালালেন , এই ন্যায্য মানবিক অধিকার আন্দোলন সমগ্র আমেরিকাসহ দ্রুত ইউরোপের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ল। অবশেষে আরো অনেক রক্তের বিনিময়ে রাজপথ রঞ্জিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অমানবিকতার অবসান ঘটিয়ে শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের বিজয় নিশ্চিত হল, আন্তর্জাতিকভাবে ৮ ঘণ্টা শ্রম আইন স্বীকৃতি পেল। শ্রমিকদের মজুরি ফাঁকি সহ সামগ্রীক অবস্থার প্রেক্ষিতে মহান মে দিবসকে সামনে রেখে বাস্তব চিত্রের নিরিখে বলতে হয় শ্রমিকদের এখন নিত্যদিন তাদের প্রয়োজন ও সাধ্যের মাঝখানে অমানবিক আপোষের আশ্রয় নিতে হচ্ছে, এতে ভিক্ষাবৃত্তি ও শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে শ্রমিক পরিবারগুলোর লাখো কোটি শিশু। দেশের শ্রমিকদের মজুরি খুবই কম এবং দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিশ্চিতভাবে শ্রমিকদের ক্রয় ক্ষমতাকে বহুলাংশে কমিয়ে দিয়েছে । সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে, অথচ দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের বেতন বাড়ছে না মুজুরী বাড়ছে না।এটা তো অবিচার এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সামীল বললে অতিশয়োক্তি হবে না । মে দিবসের শিক্ষাতো এই ছিল না , যখন তখন শ্রমিক ছাঁটাই ,বেতন সময় মতো না দেয়া, এগুলো অবশ্যই সংশোধন করতে হবে অন্তত শ্রম আইন এবং ধর্মীয় দিক দিয়ে সহানুভূতিশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় । এতদব্যতীত, রয়েছে বেকারত্বের দুর্বিষহ যন্ত্রণা, দেশে তিন কোটিরও অধিক বেকার যুবক সামাজিক অশান্তি নামক ব্যাধিতে ভুগছে। বন্ধঘোষিত ২৬ টি পাটকল পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করা এবং দেশে অধিকহারে ছোট বড় ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করা, তাহলে বেকারত্ব অনেকাংশে কমে আসবে। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও নৈতিকতার আলোকে এর ফয়সালা করতে হবে । আচরণে ব্যবহারে কার্যকলাপে আত্মকেন্দ্রিকতা সমাজ ব্যাধিতে যেন ভরা, চাকরি না পেয়ে চরম হতাশায় জীবনের কাছে হেরে গিয়ে আত্মহত্যার এক করুন সকরুণ ইতিহাস। এহেনা বসথায় বলবো সত্যি কারের মে দিবসের মূল্যায়ন না দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর যথার্থ পারিশ্রমিক না দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর সুবিধা ব্যাতিরেকে মে দিবস পালন করা হলে তা হবে অসমাপ্ত। দিবসটি পালন করা অর্থ হবে লোক দেখানো just show এর নামান্তর ছাড়া আর কিইবা !
আগামীকাল মে দিবস, এ উপলক্ষে আমার এ নিবেদন।
শেখ আবু আসলাম বাবু।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নজরুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক এন আই নবী। খুলনা অফিসঃ ৬/১ পাবলা কেশবলাল রোড, দৌলতপুর, খুলনা। মোবাইলঃ ০১৭১৩৭০৮১৯
Copyright © 2025 বাংলার চেতনা. All rights reserved.